DU TFP Subject Review

 ♦সাবজেক্ট রিভিউঃ 


Television, Film and Photography (TFP) || টেলিভিশন, চলচ্চিত্র ও ফটোগ্রাফি


টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র জগতে ইতিবাচক পরিবর্তন এবং দক্ষ জনবল সৃষ্টির লক্ষ্যে ২০১২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন, চলচ্চিত্র ও ফটোগ্রাফি বিভাগের পথচলা শুরু। শুরুতে বিভাগের নাম ছিলো “টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র অধ্যয়ন” যা পরে পরিবর্তন করে রাখা হয় “টেলিভিশন, চলচ্চিত্র ও ফটোগ্রাফি”। সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অধীনের এই বিভাগে প্রতিবছর বি ও ডি ইউনিট থেকে ৩০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। যেসব শিক্ষার্থী গতানুগতিক বিষয়ের বাইরে সৃজনশীল কিছু পড়তে চায় তাদের জন্য এই বিভাগে রয়েছে ব্যাপক সুযোগ। যাদের পরবর্তিতে মিডিয়া জগতে যুক্ত হওয়ার ইচ্ছা আছে তাদের জন্য রয়েছে হাতে-কলমে শেখার পরিবেশ।


ডিপার্টমেন্টটি এতোদিন সোশ্যাল সাইন্স ফ্যাকাল্টি বিল্ডিং-এর গ্রাউন্ড ফ্লোরে ছিলো। কিন্তু কিছুদিন আগে তা ৭ তলায় স্থানান্তরিত হয়। নতুন জায়গায় রয়েছে বিশাল ক্লাসরুম, রিসোর্স সেন্টার কাম সেমিনার লাইব্রেরি। হাতে-কলমে কাজ শেখার জন্য রয়েছে অ্যানিমেশন ল্যাব-এডিটিং প্যানেল। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের হেকাপ প্রজেক্টের অধীনে একটি পূর্ণাঙ্গ টেলিভিশন স্টুডিও নির্মিত হয়েছে যার তত্ত্বাবধায়নে রয়েছে টেলিভিশন, ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি ডিপার্টমেন্ট। এই স্টুডিও থেকে নিয়মিত ''ডিইউ টিভি'' নামের একটি আইপি টিভি চ্যানেলের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।


বিশ্বের বড় বড় প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়েই এখন এই ধরণের বিষয় রয়েছে। কোথাও শুধু ব্যবহারিক, কোথাও তত্ত্বীয় আবার কোথাও আমাদের মতো দুটি বিষয়েই শিক্ষা দেয়া হয়। এখানে টেলিভিশন, চলচ্চিত্র ও ফটোগ্রাফির ওপর ইন্ট্রোডাকটরি কোর্সের পাশাপাশি ফিল্ম হিস্ট্রি, ল্যাঙ্গুয়েজ অফ অডিওভিজ্যুয়াল মিডিয়া, টেলিভিশন নিউজ রিপোর্টিং এন্ড অ্যাঙ্করিং, স্ক্রিনরাইটিং, অ্যাক্টিং ফর ফিল্মমেকারস, সাউন্ড অ্যান্ড মিউজিক ফর টেলিভিশন অ্যান্ড ফিল্ম, সেট ডিজাইন অ্যান্ড আর্ট ডিরেকশন, টেলিভিশন প্রোডাকশন (নিউজ অ্যান্ড প্রোগ্রাম), ডকুমেন্টরি, অ্যানিমেশন অ্যান্ড মোশন গ্রাফিকস, আর্ট অ্যান্ড এস্থেটিকস, টেলিভিশন অ্যান্ড ফিল্ম ডিরেকশন, টেলিভিশন জার্নালিজম, মিডিয়া লজ অ্যান্ড এথিকস, গ্লোবাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন এডভান্সড কোর্স আছে। ফাইনাল ইয়ারে শিক্ষার্থীদের গ্র্যাজুয়েট প্রোডাকশন বানাতে হয়। ক্লাসের বাইরেও এখানে বিভিন্ন ওয়ার্কশপ, সেমিনার, ফিল্ড ট্রিপ হয়ে থাকে।


বর্তমানে ডিপার্টমেন্টে প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ জে এম শফিউল আলম ভূঁইয়া স্যারসহ ৬ জন পূর্ণকালীন শিক্ষক রয়েছেন। ডিপার্টমেন্টের শুরু থেকেই দেশের চলচ্চিত্র ও মিডিয়া জগতের অনেক স্বনামধন্য ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিরা এখানে খন্ডকালীন পাঠদান করেছেন। এর মধ্যে হায়দার রিজভী স্যার, অমিতাভ রেজা চৌধুরী স্যার, মুন্নী সাহা ম্যাম, উত্তম গুহ স্যার, শরীফুল ইসলাম ইমশিয়াত স্যার উল্লেখযোগ্য। ডিপার্টমেন্টে টেকনিক্যালি পড়াশোনা করলে একটু পরিশ্রমে ভালো রেজাল্ট সম্ভব। এখানে ক্লাসের চাপ কম। তাই এখানে প্রচুর সময় পাওয়া যায় প্র্যাকটিক্যাল স্কিল ডেভেলাপমেন্টের। ডিপার্টমেন্টে রয়েছে একটি সক্রিয় ফিল্ম ক্লাব যা নিয়মিত ফিল্ম স্ক্রিনিং ও ফিল্ম ফেস্টের আয়োজন করে।


যুগের সাথে পাল্লা দিয়ে আসছে নতুন নতুন টেলিভিশন চ্যানেল, সংবাদপত্র এবং অনলাইন নিউজ পোর্টাল। এসব গণমাধ্যম সঠিক ভাবে পরিচালনা করার জন্য প্রয়োজন দক্ষ জনবল। টেলিভিশন, ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি ডিপার্টমেন্টে হাতে কলমে স্টুডিওর পরিবেশে কাজ করে জ্ঞান অর্জনের সুযোগ রয়েছে। এই কাজের অভিজ্ঞতা চাকরির ক্ষেত্রে অন্যদের থেকে এগিয়ে রাখবে। অনেক শিক্ষার্থী শিক্ষানবিশ অবস্থায় বিভিন্ন মিডিয়া হাউজে কাজ করতে থাকে। যাদের মিডিয়াতে কাজ করার ইচ্ছে তাদের প্রথম পছন্দ হতে পারে এই ডিপার্টমেন্ট। পড়া শেষে দেশের বিভিন্ন ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম, বিভিন্ন বিজ্ঞাপনী সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক এনজিওগুলোয় বেশ কাজের সুযোগ আছে। রয়েছে সরকারি চাকরি যেমন- বিসিএস ক্যাডার, তথ্য মন্ত্রণালয়ে কাজের ব্যবস্থা। প্রাতিষ্ঠানিক ক্যারিয়ার ছাড়াও সৃজনশীল সব ফ্রিল্যান্স কাজের বিশাল সুযোগ মেলে এখানে পড়ার মাধ্যমে। প্র্যাকটিক্যাল ডিপার্টমেন্ট হওয়া স্বত্বেও থিওরেটিক্যাল পড়াশোনায় আগ্রহী হলে রয়েছে স্কলার হওয়ার সুযোগ। বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্কলারশিপ পাওয়া যায় এই বিষয়ের উপর। ইতোমধ্যে ডিপার্টমেন্টের সিনিয়ররা বড় বড় ফিল্ম প্রোডাকশনে কাজ করেছে। তাদের নির্মিত ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফিল্ম দেশে-বিদেশে বিভিন্ন ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে স্ক্রিনিং হয়েছে এবং অনেক পুরস্কারও লাভ করেছে।


এই ডিপার্টমেন্ট নতুন হওয়ায় এবং এ নিয়ে অনেকের স্পষ্ট ধারণা না থাকায় সাবজেক্ট চয়েসের প্রথমে কম শিক্ষার্থীই দেয়। এ জন্য প্রতি বছর মেরিট লিস্টে অনেক দূর পর্যন্ত যায়। গতবছর বি ইউনিটে ২০০০+ এবং ডি ইউনিটে সাইন্সে ৯০০+ পর্যন্ত গিয়েছিলো। তবে এবার সাবজেক্ট কন্ডিশন না থাকায় এতোদূরে যাবে বলে মনে হয় না। যাদের সাংবাদিকতা নিয়ে পড়ার ইচ্ছে তারা সাবজেক্ট চয়েসে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতার পরই এই সাবজেক্ট রাখতে পারো। আর আমি মনে করি টেলিভিশন সাংবাদিকতার জন্য এই ডিপার্টমেন্ট থেকেই সবচেয়ে বেশি শিখতে পারবে।


তুলনামূলক নতুন এই ডিপার্টমেন্টে বর্তমানে অনার্স ৬ষ্ঠ ব্যাচ চলছে। আমাদের এই ডিপার্টমেন্ট আকারে ছোট হলেও এখানকার সিনিয়র-জুনিয়র সম্পর্ক খুব গভীর। প্রতি বছর ডিপার্টমেন্ট অ্যানিভার্সারি, নবীনবরণ, ফিল্ম ফেস্ট, পিকনিকে একসাথে অনেক আনন্দ হয়। এছাড়া প্রথম বর্ষ থেকেই সিনিয়রদের গ্র্যাজুয়েট প্রোডাকশনের কাজের মাধ্যমে যেমন অভিজ্ঞতা বাড়ে তেমনি সিনিয়রদের সাথে সম্পর্ক ভালো হয়। যে কোন সমস্যায় সিনিয়ররা গাইডলাইন দিয়ে সাহায্য করে।


এই ডিপার্টমেন্ট আসতে হলে অবশ্যই সাহসী হতে হবে, জানার আগ্রহ থাকতে হবে। অনেকে ডিপার্টমেন্টের নাম শুনে ভুল অনুমান করে। আমাদের অনেককেই “নায়ক/ নায়িকা হবা?” “এখানে পড়ে ভবিষ্যৎ কি?” টাইপ কথা শুনতে হয়েছে। তবে এই ডিপার্টমেন্ট সম্বন্ধে ভালো করে খোঁজ নিলে সকল ভ্রান্ত ধারণা দূর হবে।


এ ধরনের বিভাগ পরিচালনায় যে বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন সেটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অনেকখানি সমস্যার। প্র্যাক্টিক্যাল ডিপার্টমেন্ট হওয়ায় এখানে পড়াশোনার খরচ অন্যান্য ডিপার্টমেন্টের থেকে বেশি। ভর্তি হতে প্রায় ১৫ হাজার টাকা এবং প্রতি সেমিস্টারে প্রায় ১০ হাজার টাকা ফি দিতে হয়। এছাড়া গ্র্যাজুয়েট প্রোডাকশন বানাতে ১০-৫০ হাজার টাকা পর্যন্তও খরচ হয়। তবে ডিপার্টমেন্ট এ সমস্যা সমাধানের যথাসাধ্য চেষ্টা করছে।


গৎবাঁধা পড়াশোনার বাইরে এই ডিপার্টমেন্টে সুযোগ রয়েছে নিজের সৃজনশীলতাকে ফুটিয়ে তোলার। তবে প্র্যাকটিক্যাল স্কিল ডেভেলাপমেন্টে আগ্রহ না থাকলে এখানে না আসাই ভালো। এবার, তোমার জন্য বলতে চাই একবার এসে ঘুরে যেও আমাদের ডিপার্টমেন্ট থেকে। শুভকামনা তোমার জন্য।


[বি. দ্র. এই পোস্টে আমি আমাদের শিক্ষকদের কথা, সিনিয়রদের অভিজ্ঞতা এবং আমার ব্যক্তিগত মতামত একসাথে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। কোন ভুল-ত্রুটি হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার জন্য অনুরোধ করা হলো।]


সাজিদ রেজা করিম

টেলিভিশন, চলচ্চিত্র ও ফটোগ্রাফি, ৬ষ্ঠ ব্যাচ (অনার্স)


#SubjectReview #BODUc




Muinuddin Gaus

Mohammad Muinuddin Gaus, a dedicated student of the Islamic Studies department at the University of Dhaka, shares valuable information on various online platforms. To learn more about him, follow his social media links.

Post a Comment

Previous Post Next Post