DU Physics Subject Review

 সাবজেক্ট রিভিউ


বিষয় : পদার্থবিজ্ঞান 


ছোটবেলায় লোডশেডিং হলে অনেকেই রাতের আকাশে তারা গুনতে বের হয়ে যেতো। একদিন বাবার মুখেই হয়তোবা শোনা হয়েছে সপ্তর্ষীমণ্ডল, কালপুরুষ, জেমিনি সহ আরও অনেক নক্ষত্র পুঞ্জের কথা আর তাদের জীবনকথা। কিন্তু সেই ছোটবেলায় হয়তো জানা ছিল না, এটা পদার্থবিজ্ঞানের জ্যোতির্বিদ্যা অংশের পাঠ্য বিষয়। আকাশের দিকে তাকিয়ে সেদিন হয়তো অনেকেই ভেবেছিলো একদিন নিজেও এই মহাকাশে লুকিয়ে থাকা হাজারো সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করবে আর পৃথিবীর বুকে রেখে যাবে অনেক জটিল ধাঁধা। 


বিশ্ব এখনও, আইন্সটাইনের আপেক্ষিকতা আর ম্যাক্সওয়েল এর কোয়ান্টাম ফিজিক্সের  বিস্ময় কাটিয়ে উঠতে পারেনি, বোধ হয় পারবেও না। শুধু ভাবা যায় একদিন হয়তো প্রকৃতির এক অদেখা বাস্তব সত্যকে পৃথিবীর বুকে মেলে ধরা হবে, আর রেখে যাওয়া যাবে তার বিস্ময়!


বিজ্ঞানের এই চমৎকার অংশ পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে আজ কিছু খুঁটিনাটি বিষয় জেনে নেওয়া যাক। 


- কোর্স সাধারণত কত বছরের? 

অনার্স চার (০৪) বছর এবং মাস্টার্স এক (০১) বছর। 


- এই সাবজেক্টটি বাংলাদেশের কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হয়? 

- ঢাবি, জবি, জাবি, রাবি, বরিশাল বিঃ সহ সকল সরকারি বিশ্ব বিদ্যালয়ে। এ ছাড়াও ব্র্যাক (এখনও আছে কি না নিশ্চিত নই ) ও আইইউবি তে পদার্থবিজ্ঞান পড়ার সুযোগ আছে। 


-  এই সাবজেক্টে স্নাতক পর্যায়ে কি কি কোর্স পড়ানো হয়? 

মেকানিক্স এন্ড প্রোপার্টিস ওফ ম্যাটার, ইলেকট্রিসিটি ম্যাগনেটিসম, থার্মোডাইনামিক্স এবং স্ট্যাটিস্টিকাল ফিজিক্স, ইলেকট্রনিক্স ( ১,২), এটমিক এন্ড মলিকুলার / মডার্ন ফিজিক্স, সলিড স্টেট ফিজিক্স (১,২), কনডেন্সড ম্যাটার ফিজিক্স ও ম্যাটেরিয়ালস সায়েন্স, স্ট্যাটিস্টিক্যাল মেকানিক্স (১ ও ২), কোয়ান্টাম মেকানিক্স (১,২ ও মাস্টার্স) , ক্ল্যাসিকাল ইলেকট্রোডাইনামিক্স, ক্ল্যাসিকাল মেকানিক্স ও রিলেটিভিটি, প্লাসমা ফিজিক্স, ওয়েভস এন্ড অপটিক্স, লেসার ফিজিক্স, বায়ো এন্ড মেডিক্যাল ফিজিক্স, নন ইকুইলিব্রিয়াম স্ট্যাটিস্টিক্যাল মেকানিক্স, ফিল্ড থিওরী, এক্সপেরিমেন্টাল মেথডস ওফ ফিজিক্স, নিউক্লিয়ার ফিজিক্স (১,২ এবং মাস্টার্সে) ইত্যাদি হল ফিজিক্সের কোর্স, কম্পিউটেশনাল ফিজিক্স ও প্রোগ্রামিং, এস্ট্রোনমি, পার্টিকেল ফিজিক্স বা হাই এনার্জি ফিজিক্স। 

এ ছাড়াও গণিতের ক্যালকুলাস, ডিফারেন্সিয়াল জিওমেট্রি ও ক্যালকুলাস, লিনিয়ার এলজেব্রা, ডিফারেন্সিয়াল ইকুয়েশনস, নিউমেরিক্যাল এনালাইসিস, স্ট্যাটিসটিক্সের স্ট্যাটিসটিক্স ও প্রোব্যাবিলিটির কোর্স, কেমিস্ট্রির বেসিক কেমিস্ট্রি, বিশ্ববিদ্যালয় ভেদে জিওলজি/ জিও ফিজিক্স এসব মাইনর হিসেবে পড়তে হয়। বিশ্ববিদ্যালয় ভেদে বিষয় গুলোর নামে ভিন্নতা থাকতে পারে।  


- এ বিষয়ে পড়াশোনার ধরন কেমন? তাত্ত্বিক নাকি ব্যবহারিক? 

দু'টোই, ব্যবহারিক জ্ঞান ছাড়া তত্ত্বীয় বিদ্যা অনেকটাই অচল। প্রচুর ব্যবহারিক করতে হয়। এ ছাড়াও বর্তমান বিশ্বে পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্রদের কম্পিউটেশনাল ফিজিক্স, প্রোগ্র্যামিং এ ভাল দখল থাকতে হবে কারণ এখন বেশির ভাগ ফিজিক্সের এক্সপেরিমেন্ট সিমুলেট করে দেখা হয়। 


- একজন সদ্য এইচএসসি পাশ শিক্ষার্থী কিভাবে বুঝতে পারবে এ বিষয়ে তার আগ্রহ রয়েছে কিনা?

গণিত ও পদার্থবিজ্ঞানে প্রচুর আগ্রহ ও দক্ষতা থাকলে। দেশ বিদেশের গবেষনা সম্পর্কে আগ্রহ থাকলে। ইন্টারনেটে পদার্থবিজ্ঞানের প্রচুর লেকচার আছে, এসব লেকচার দেখে ধারণা নিতে পারো বিষয়টা তোমার কেমন লাগছে, বুঝতে পারছো কী না। 


- এ বিষয়ে পড়াশোনা করে ভালো করতে হলে এসএসসি অথবা এইচএসসি লেভেলের কোন বিষয়গুলোর উপর দক্ষতা থাকা প্রয়োজন? 

গণিত ও পদার্থবিজ্ঞানে। 


- এই বিষয়ে পড়াকালীন কি কি এক্সট্রা কারিকুলার আক্টিভিটির সাথে যুক্ত থাকা যায় যা পরবর্তীতে ক্যারিয়ার গঠনে হেল্প করবে? 

আসলে পদার্থবিজ্ঞান অজানা কে ব্যাখ্যা করার বিজ্ঞান। পদার্থ বিজ্ঞানের ছাত্রের প্রোগ্রামিং বা গণিতে উৎসাহ যেমন কাযে দেবে তেমনি ছবি আঁকা কিংবা সংগীত ও কাজে দেবে না এমন বলা যায় না। (পৃথিবীর সব থেকে বিখ্যাত পদার্থ বিজ্ঞানী, পদার্থবিজ্ঞানের কথা মনে করে চোখ বুজলেই যার ছবি মনে ভাসে, সেই আইনেস্টাইন নিজেও বেহালা বাজাতেন, ফাইনম্যান বাজাতেন বঙ্গো, আমাদের সত্যেন বসু ও খুব ভাল এস্রাজ বাজাতেন। সুতরাং তত্ত্বীয় পদার্থ বিজ্ঞানের সাথে বাদ্য যন্ত্রের যে ভাল যোগাযোগ আছে এমন দাবী করাই যায়।  


- বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অবস্থায় কোনো ইন্টার্নশিপের সুযোগ আছে? 

সরাসরি ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কীত বিষয় না হওয়ায় নেই, তবে দেশের গবেষণা কেন্দ্র ও বিশবিদ্যালয় শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে গবেষণা করার সুযোগ আছে। 


- এ বিষয়ে পড়াশোনা শেষে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রগুলো কি কি? 

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে স্কুল পর্যন্ত শিক্ষকতার সুযোগ আছে। এ ছাড়াও সারা দেশের গবেষণা প্রতিষ্ঠান ( যেমন- বাপশক, বিসিএসআইআর, স্পার্সো, পাট গবেষণা কেন্দ্র, সমুদ্র গবেষণা কেন্দ্র ইত্যাদি), পরমাণু শক্তি উৎপাদন কোম্পানি, বাপেক্স, পেট্রোবাংলা ইত্যাদি। 

এ ছাড়াও প্রচুর ছাত্র বিসিএস, ব্যাংক এসব প্রতিষ্ঠানেও আছেন।  


- এ বিষয়ে পড়াশোনা শেষে প্রাইভেট চাকরির ক্ষেত্রগুলো কি কি?  

প্রাইভেট ব্যাংক (তবে কিছু ব্যাংকে পদার্থবিদ্যার ছাত্ররা এপ্লাই করতে পারেন না, কিন্তু কেন তা ঠিক নিশ্চিত নয়, কারণ পদার্থ বিদ্যার ছাত্রদের যে গণিত ও যুক্তি বিজ্ঞানের যে গাথুনি থাকে তা ফিনানশিয়াল এনালাইসিস, একচুরিয়াল সায়েন্স সহ ব্যাংকিং এর সব ক্ষেত্রে কাজে লাগানো সম্ভব)।

ওয়াল্টন সহ কিছু প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান পদার্থবিজ্ঞানের গ্রাজুয়েট দের নিয়োগ দেয়,   প্রাইভেট স্কুল ও কলেজ আছে।

বিদেশে পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্ররা সেমিকন্ডাকটর ইন্ডাস্ট্রি, ডেটা সায়েন্স, ম্যাটেরিয়ালস ইন্ডাস্ট্রি ছাড়াও অনেক ইন্ডাস্ট্রি তে চাকরির সুযোগ আছে। আমি নিশ্চত আমাদের দেশেও এমন সব সুযোগ আস্তে আস্তে তৈরী হবে। 


- এ বিষয়ে পড়াশোনা করে বিশ্ববিদ্যালয়ে লেকচারার হবার সুযোগ কেমন? 

দেশের সব সরকারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক দরকার পড়ে, পদার্থবিজ্ঞান না পড়ালেও ইঞ্জিনিয়ারিং এমনকী বিবিএ এমবিএ পড়তেও পদার্থিবিজ্ঞান পড়তে হয়। তবে এ জন্যে রেসাল্ট ভালো থাকতে হবে (৩.৫+) এছাড়াও বাইরের ডিগ্রি বা পাবলিকেশন থাকলে ভাল হয় তবে লেকচারার পদের জন্য মাস্ট নয়। 


- এই বিষয়ে পড়াশোনা শেষে স্যালারি কেমন?

সরকারি স্কেলে ৯বম গ্রেডের বেতন (৪০,০০০/-), বেসরকারি স্কেলে ৩০,০০০ থেকে ৭০,০০০/- পর্যন্ত। অভিজ্ঞতার সাথে সাথে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রেড-১ অধ্যাপক হবার সুযোগ আছে যেখানে বেতন দেড় লাখের মতন। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপকের ৩-৪ লক্ষ কিংবা তারও বেশি পাবার দৃষ্টান্ত আছে।  মোট কথা, সময় এবং অভিজ্ঞতার সাথে সাথে স্যালারি স্কেল ও বাড়তে থাকে। 


- রিসার্চের কেমন সুযোগ রয়েছে?

এক কথায় প্রচুর, পদার্থবিজ্ঞানের উদ্দেশ্যই  মূলত গবেষণা। দেশে যেমন আছে বিদেশে প্রচুর আছে। ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, দক্ষিন কোরিয়া এসব দেশে প্রচুর প্রচুর অর্থ লগ্নি করা হয় গবেষণায়। আমাদের দেশেও কম নয়, হয়ত আমরা খবর রাখি না তেমন। 


- এই বিষয় পড়ে বাইরের কোন দেশগুলোয় যাওয়ার সুযোগ বেশি? 

ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, দক্ষিন কোরিয়া ইত্যাদি।


- দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষার জন্য গেলে স্কলারশিপ কি ধরণের পাওয়া যায়? স্কলারশিপ পেতে কি কি পন্থা অবলম্বন করতে হয়? 

প্রচুর স্কলারশিপ আছে, চোখ কান খোলা রাখতে হবে। জাপানে মেক্সট, আমেরিকার ফুলব্রাইট ও বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে গবেষণা বা টিচিং এসিসটেনটশিপের ফান্ড, ইউরোপে ইরাসমাস মুন্ডাস, সুইডিশ সরকারের বৃত্তি, অস্ট্রেলিয়াতে নানা ধরণের বৃত্তি কিংবা গবেষণা ভাতা রয়েছে। 


পদার্থবিজ্ঞান সরাসরি ক্যারিয়ার ওরিয়েন্টেড বিষয় নয়, সুতরাং অল্প পড়ে-দ্রুত পাশ করে চাকরি পাবার আশা থাকলে পদার্থবিজ্ঞান তোমাকে নিরাশ করতে পারে। তোমার মুঠোফোন, মুঠোফোনের জিপিএস, মাথার উপর যে ফ্যান ঘুরছে, চোখের সামনে যে মনিটর চলছে সব। আবহাওয়া বিদ্যা, রসায়ন, চিকিৎসা বিজ্ঞান বিশেষত ক্যান্সার চিকিৎসা, ফিন্যান্স, ইকোনমিক্স এমন কী ভাষা বিজ্ঞানে পর্যন্ত পদার্থ বিজ্ঞানের অবদান আছে। পদার্থ বিদ্যা কঠিন, তা অস্বীকার করার উপায় যেমন নেই, আবার অজানাকে জানার যে তীব্র আনন্দ তাকেও অস্বীকার করার উপায় নেই।   


তথ্য সহায়তায় এবং লেখায় - 

ইফতেখার বিন ইলিয়াস

প্রাক্তন ছাত্র, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। 


#subject #recview #subject_review #physics #physics_review #admission #career #careerology



Muinuddin Gaus

Mohammad Muinuddin Gaus, a dedicated student of the Islamic Studies department at the University of Dhaka, shares valuable information on various online platforms. To learn more about him, follow his social media links.

Post a Comment

Previous Post Next Post