Department of Islamic Studies
সাবজেক্ট হিসেবে ইসলামিক স্টাডিজের আসলে কোনো রিভিউ হয় না, বিশ্ববিদ্যালয়ে মানুষ যেই উদ্দেশ্যে আসে, সেই দিক বিবেচনা করলে এই সাবজেক্টের কোনো কূলকিনারা খুঁজে পাওয়া যাবে না, এতটাই বিস্তৃত। এরপর আপনি যখন রিভিউ চান, তার অর্থ হচ্ছে, চাকরির প্রতিযোগিতামূলক বাজারে এই সাবজেক্টের পারফরম্যান্স আপনি জানতে চান। যাহোক, কয়েকটা পয়েন্ট উল্লেখ করছি।
ইসলামিক স্টাডিজ মূলতঃ একটা অরিয়েন্টালিস্ট সাবজেক্ট। ইসলাম সম্পর্কে যদি আপনার কোনো স্পেসিফিক দৃষ্টিভঙ্গি না থাকে, তাহলে এখানে পড়ার পর আপনি এমন একটা দৃষ্টিভঙ্গি পাবেন যেই দৃষ্টিতে ওরিয়েন্টালিস্ট বা প্রাচ্যবিদরা ইসলামকে দেখে, অর্থাৎ ওয়েস্টার্ন ভিউ থেকে ইসলাম অবজারভেশন। এবং এখানে ৫ বছরে ইসলামের প্রায় সব কনটেন্টগুলো শুধুমাত্র ওভারভিউ করা হয়, কারণ এর বিস্তৃতি অনেক বিশাল। সুতরাং হাসান আলী নদভী কিংবা ইউসুফ কারজাভী হবার স্বপ্ন নিয়ে এখানে কেউ আসবেন না।
ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের বিষয়বস্তু মূলতঃ ইতিহাস, সাহিত্য, দর্শন, ধর্ম, ভাষা, অর্থনীতি এবং আইনকে কেন্দ্র করে।
ইতিহাস:
* ইসলামের উৎপত্তি এবং ক্রমবিকাশ
* মুসলিম সভ্যতার ইতিহাস
* ইসলামের রাজনৈতিক, সামাজিক, এবং অর্থনৈতিক ইতিহাস
*বাংলাদেশের ইতিহাস (বাংলাদেশ স্টাডিজ)
সাহিত্য:
* কবিতা, গল্প, নাটক, এবং কথাসাহিত্য
* মুসলিম লেখকদের কর্ম
* সাহিত্যিক সমালোচনা
দর্শন:
* ইসলামিক দর্শন এবং ধর্মতত্ত্ব
* স্রষ্টা, এলেম এবং নীতিশাস্ত্রের প্রকৃতি
* বিভিন্ন দার্শনিক ধারার আলোচনা সমালোচনা
ধর্ম:
* কুরআন, হাদিস, এবং ইজমা
* ইসলামিক আইন এবং নীতিশাস্ত্র
* বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের তুলনা
ভাষা:
* আরবি ভাষা এবং সাহিত্য
* আরবি অলংকারশাস্ত্র
* ভাষাগত বিশ্লেষণ
অর্থনীতি:
* অর্থনীতির বেসিক ধারণা ও প্রচলিত বিভিন্ন অর্থনৈতিক দর্শন।
* ইসলামী অর্থনীতি
* ইসলামিক ব্যাংকিং এবং কনভেনশনাল ও ইসলামী ব্যাংকিংয়ের পার্থক্য বিশ্লেষণ
আইন:
* ইসলামিক আইন (শরীয়া)
* ফৌজদারি, দেওয়ানি, এবং মুসলিম পারিবারিক আইন
* আইনি বিশ্লেষণ
এছাড়াও রয়েছে অ্যান্থ্রোপলজি, সোস্যাল পলিটিক্যাল সায়েন্স, হিউম্যান রাইটস এবং সোস্যাল এন্ড ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার ইন ইসলাম, যেগুলো সমকালীন সমাজে ইসলাম কিভাবে প্রয়োগ ও কার্যকর হবে সেই বিষয়ে ধারণা দিবে।
ঢাবির ইসলামিক স্টাডিজ থেকে পড়ে কনটেম্পোরারি ইসলাম এবং কনটেক্সচুয়াল ইসলাম নিয়ে স্টাডি করা সহজ হবে এবং বাহিরের দেশগুলোর সিলেবাসের সাথে এডজাস্ট করতে পারবেন; যেহেতু এই সিলেবাস অনেকটা অরিয়েন্টালিস্ট ধাঁচের এবং তাই ওয়েস্টার্ন পারসপেক্টিভ বোঝা সহজ হবে।
উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার জন্য মধ্যপ্রাচ্য, তুরস্ক, মালয়েশিয়া, ব্রিটেনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্কলারশিপে যাওয়ার রয়েছে অবারিত সুযোগ।
সুতরাং আপনার যদি প্যাশন থাকে, সমসাময়িক কালের চাহিদা থেকে ইসলামকে নিয়ে স্টাডি করার ইচ্ছা থাকে, তাহলে আপনার জন্য ইসলামিক স্টাডিজ উপযুক্ত সাবজেক্ট। ইসলামের অন্যান্য খাত তো আছেই গবেষণার জন্য, তবে কারিকুলাম দেখে স্পেসিফিক এই বিষয়টা হাইলাইট করা প্রয়োজন মনে হলো, যেহেতু যুগের চাওয়াও এইটা।
এবার আসি চাকরি প্রসঙ্গে। এই সাবজেক্টে চাকরির বাজারে মেজর ফিল্ড দুইটা - টিচিং আর ব্যাংকিং।
☞ বিসিএসের জেনারেল ফিল্ডগুলাতে তো সবাইই সুযোগ পায়। তবে স্পেসিফিকলি এই সাবজেক্টের জন্য রয়েছে বিসিএস ইসলামিক স্টাডিজ, যদিও পোস্ট খুব অপ্রতুল। শিক্ষা ক্যাডারেও এই সাবজেক্টে রয়েছে বেশ সুযোগ। এবং বিসিএসের স্পেসিফিক এই খাতগুলোতে ঢাবির ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগেরই দখল থাকে সবসময়। জেনে খুশি হবেন যে, ৪৩ তম বিসিএসে শিক্ষায় ১৭টা পোস্টের মধ্যে ১৪টাই ঢাবির ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ থেকে।
☞ দেশে পাবলিক প্রাইভেট মিলিয়ে প্রচুর বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজ রয়েছে যেগুলোতে অনার্স পর্যায়ে ইসলামিক স্টাডিজ বিদ্যমান। সুতরাং শিক্ষকতা ও গবেষণায় এই সাবজেক্টে পরিধির বিস্তৃতি অস্বীকার করা সম্ভব না।…এছাড়াও সরকারি বেসরকারি মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যুক্ত হবার সুযোগ তো আছেই।
☞ আরেকটা মেজর ফিল্ড হচ্ছে ব্যাংকিং। শাহজালাল, সোস্যাল ইসলামি, আল আরাফাহসহ ইসলামি ব্যাংকগুলোতে ইসলামিক স্টাডিজের শিক্ষার্থীরা সবসময়ই অগ্রাধিকার পায়। এছাড়াও বর্তমানে প্রায় সকল কনভেনশনাল ব্যাংকেই ইসলামিক শাখা খোলা হয়েছে যার মধ্যে সোনালী, পূবালী, আইএফআইসি, এবি, ওয়ান, ঢাকা ব্যাংক প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য; সেখানেও একক আধিপত্য থাকবে ইসলামিক স্টাডিজের।
সবশেষে আপনার সিদ্ধান্ত আপনার, আপনি জীবনকে কোনদিকে মোড় দিতে চান সেটা অবশ্যই আপনার উপর নির্ভরশীল। আপনার জন্য শুভ কামনা রইলো !
ইসলামিক স্টাডিজ
১৭তম ব্যাচ (১০২)
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।