DU Nuclear Engineering Subject Review

 সাবজেক্ট রিভিউ 

বিষয় : নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং 


আচ্ছা...

শক্তি জিনিসটা কি?

ঠিক কতটুকু শক্তি থাকলে আপনি আত্মনির্ভর?

আর কতটুকু শক্তিই বা আপনাকে করে তুলতে পারে পরাক্রমী?

না রে ভাই! আমি বাংলা সিনেমার ডায়লগ দিচ্ছি না; বাস্তব কথা বলছি। ধীরে ধীরে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি তথ্যনির্ভর এক যুগের দিকে ঠিকই, কিন্তু আগামী সেই সময়ের উপর যে এখনকার এই শক্তিকেন্দ্রিক যুগের কোনো প্রভাব থাকবে না তা কিন্তু সত্য নয়!

যাই হোক! বর্তমান সময়ের ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলোকে ক্ষমতাবান ও দুর্বল রাষ্ট্রগুলোকে তাদের বাধ্যগত রাখতে বিজ্ঞানের যে সন্তানটির প্রভাব সবচেয়ে বেশি তার নাম নিউক্লিয়ার এনার্জি। এই এনার্জির ভূমিকা এখন এতই বেশি যে বৈশ্বিক কলহ সৃষ্টিতে এর যেমন বদনাম রয়েছে, ঠিক বিপরীতেই বিশ্বশান্তিরক্ষায় রয়েছে এর ব্যাপক সুনাম।

আর এই নিউক্লিয়ার এনার্জির খুটিনাটি জানার বিদ্যাই হলো নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং।


- কোর্স সাধারণত কত বছরের? 

চার বছরের। 


- এই সাবজেক্টটি বাংলাদেশের কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হয়?

বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মিলিটারি ইন্সটিটিউট অফ সাইন্স এন্ড টেকনোলজি (MIST) তে অনার্স ও মাস্টার্স কার্যক্রম চালু আছে। চুয়েটে ডিপার্ট্মেন্ট খোলা হয়েছে কিন্তু শিক্ষাকার্যক্রম এখনো শুরু হয় নি। এছাড়া বুয়েটে ইন্সটিটিউট অফ নিউক্লিয়ার পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং রয়েছে। সেখানে নিউক্লিয়ারের কিছু শর্ট কোর্স করানো হয়। কোন বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে এই সাব্জেক্ট চালু নেই।


- এই সাবজেক্টে পুরো ৪ বছরে কি কি কোর্স পড়ানো হয়? 

নিউক্লিয়ার  ইঞ্জিনিয়ারিং মূলত মাল্টিডিসিপ্লিনারি সাব্জেক্ট। এখানে যেমন কোডিং শিখা জরুরী তেমনি ইলেকট্রিকাল এবং মেকানিকাল এর অনেক কোর্স পড়ানো হয়। কোডিং এ মূলত সি আর সি ++। মেকানিকাল এর কোর্সের মধ্যে আছে পাওয়ার প্লান্ট ডিজাইন, থার্মাল হাইড্রলিক্স এর কোর্স। আর ইলেকট্রিকাল এর কোর্স গুলোর মধ্যে  সার্কিট এনালাইসিস, ইলেকট্রনিক্স, ইন্সট্রুমেন্টেশন। এছাড়া মূল নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং এর জন্য কোর সাব্জেক্ট হিসেবে রিয়েক্টর ফিজিক্স, নিউক্লিয়ার ফিজিক্স, ডিকমিশনিং, হেলথ ফিজিক্স, ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট পড়ানো হয়। ম্যাথের অনেকগুলো কোর্স আছে যেমন ক্যাল্কুলাস, ভেক্টর এনালাইসিস, নিউমেরিকাল এনালাইসিস, কমপ্লেক্স ভ্যারিয়েবল এনালাইসিস, ডিফারেন্সিয়াল ইকুয়েশন। এছাড়া এক্সট্রা কিছু কোর্স যেমন রাশিয়ান ভাষা, সোশিওলজি, একাউন্টিং, ইকোনোমিক্স পড়ানো হয়।


- এ বিষয়ে পড়াশোনার ধরন কেমন? তাত্ত্বিক, ব্যবহারিক নাকি উভয়ই? 

মূলত তাত্ত্বিক পড়াশোনাই বেশী। ব্যবহারিক কাজ কম।


- একজন সদ্য এইচএসসি পাশ শিক্ষার্থী কিভাবে বুঝতে পারবে এ বিষয়ে তার আগ্রহ রয়েছে কিনা? 

মূলত তার কোডিং এবং ফিজিক্সে আগ্রহ থাকলে এই বিষয়ে আসতে পারে।


- এ বিষয়ে পড়াশোনা করে ভালো করতে হলে এসএসসি অথবা এইচএসসি লেভেলের কোন বিষয়গুলোর উপর দক্ষতা থাকা প্রয়োজন? 

ম্যাথ, আর ফিজিক্স।


- এই বিষয়ে পড়াকালীন কি কি এক্সট্রা কারিকুলার আক্টিভিটির সাথে যুক্ত থাকা যায় যা পরবর্তীতে ক্যারিয়ার গঠনে হেল্প করবে? 

ডিবেটিং, সাইন্স সোসাইটি, কালচারাল সোসাইটি এর সাথে যুক্ত থাকা যায় অনায়াশেই।


- বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অবস্থায় কোনো ইন্টার্নশিপের সুযোগ আছে? 

হ্যা। ইন্টার্নশীপের সুযোগ আছে। মূলত কোর্সের পার্ট। ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রেনিং বলা হয়। তিন জায়গায় করানো হয়। এটমিক এনার্জি সেন্টার ঢাকা(AECD), বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (BAERA) ঢাকা, পরমাণু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ইন্সটিটিউট (AERE) সাভার।


- এ বিষয়ে পড়াশোনা শেষে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রগুলো কি কি? 

চাকরির ক্ষেত্র এখন শুধুমাত্র রুপপুর নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট। এছাড়া বাংলাদেশ পরমানু শক্তি কমিশনে জব পজিশন খোলা নিয়ে কাজ চলছে। এছাড়া বিসিএস দিয়ে প্রশাসনিক বিভিন্ন চাকুরীতে যোগদানের সুযোগ রয়েছে। 


- এ বিষয়ে পড়াশোনা শেষে প্রাইভেট চাকরির ক্ষেত্রগুলো কি কি? 

প্রাইভেট চাকরির কোন ক্ষেত্র নেই ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফিল্ডে।


- এ বিষয়ে পড়াশোনা করে বিশ্ববিদ্যালয়ে লেকচারার হবার সুযোগ কেমন? 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, আর চুয়েটে আপাতত লেকচারার হিসেবে জয়েন করা যাবে। লেকচারার হবার জন্য মাস্টার্স ডিগ্রি থাকা বাধ্যতামূলক।


- চাকরির ক্ষেত্রে স্যালারি রেঞ্জ কি রকম হয়? 

বাংলাদেশে  নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে কর্মরত একজন অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তি সাধারণত মাসে মাসে প্রায় গড়ে ৬২,০০০ টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারেন। এক্ষেত্রে শুরুর দিকে ২৮,৫০০ হলেও এক পর্যায়ে তা বাড়তে বাড়তে লাখ খানেকের কোটায় ও যেতে পারে।  


- রিসার্চের কেমন সুযোগ রয়েছে? 

যেহেতু মাল্টিডিপ্লিনারি সাব্জেক্ট, তাই রিসার্চ মূলত কম্পিউটেশনাল বা কোডিং রিলেটেড কাজ বেশী। এডভান্সড নিউক্লিয়ার রিয়েক্টর ও ফিউশনে রিসার্চ করার সু্যোগ আছে। এছাড়া ডিকমিশনিং ও নিউক্লিয়ার ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট এ রিসার্চ করার সু্যোগ আছে।


- এই বিষয় পড়ে বাইরের কোন দেশগুলোয় যাওয়ার সুযোগ বেশি? 

রাশিয়া, আমেরিকা, ইংল্যান্ড, কানাডা, ফ্রান্স। এশিয়ার মধ্যে জাপান, কোরিয়া।


- দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষার জন্য গেলে স্কলারশিপ কি ধরণের পাওয়া যায়? স্কলারশিপ পেতে কি কি পন্থা অবলম্বন করতে হয়? 

ইরাসমাসমুন্ডাস স্ক্লারশিপ রয়েছে ইউরোপের। সেটার জন্য আই এল টি এস প্রয়োজন ও ভাল একাডেমিক স্কোর। অন্যান্য দেশের জন্য ও একই কথা। আমেরিকায় ও সিলেক্টিভ কিছু ইউনিভার্সিটি ছাড়া আই এল টি এস দিয়ে এপ্লাই করা যায়। তবে আমেরিকার জন্য জি আর ই সহ দিলে ফান্ডিং পেতে অনেকখানি সুবিধা হয়।


সবশেষে বলতে হয়, যদি অণু-পরমাণুর জগত সম্পর্কে তোমার আগ্রহ থাকে, নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে যদি প্যাশনেট হও এবং চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয় ক্যারিয়ার গড়তে দৃঢ় প্রত্যয়ী হও তাহলে নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা হতে পারে তোমার জন্য স্বপ্নপূরণের চাবিকাঠি। 


তথ্য সহায়তা এবং লেখায় - 

ফারশিদ রেজা

নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। 


পরিমার্জনা এবং পরিবর্ধন - 

মুহম্মদ সাজিদ শাহরিয়ার শুভ্র 

কনটেন্ট রাইটার, ক্যারিয়ারোলোজি। 


#subject #review #subject_review #nuclear #nuclear_engineering #engineering #engineer #admission #career #careerology



Muinuddin Gaus

Mohammad Muinuddin Gaus, a dedicated student of the Islamic Studies department at the University of Dhaka, shares valuable information on various online platforms. To learn more about him, follow his social media links.

Post a Comment

Previous Post Next Post