DU Public Administration Subject Review

 Public Administration❤


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় যারা বি ইউনিটে সুযোগ পেয়েছো তাদের সবাইকে অভিনন্দন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারে স্বাগতম। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাবার পরেই শিক্ষার্থীদের যে বিষয়টি নিয়ে সবচেয়ে বেশি দোটানায় পড়তে দেখা যায় তা হলো সাবজেক্ট সিলেকশন। এতো এতো সাবজেক্ট এর ভীড়ে কোন বিষয়টি কেমন এবং পছন্দক্রম নির্ধারণ করতে হিমশিম খায় অনেকেই। তাই তোমাদের জন্য আমার নিজের বিভাগ-লোকপ্রশাসন বিভাগের রিভিউ দিচ্ছি।


সৃষ্টির জন্মলগ্ন থেকেই পৃথিবী একটি নিয়মের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। প্রতিটি সৃষ্টিই নির্দিষ্ট নিয়ম অনুসরণ করে। মানুষও তার বিপরীত নয়। আর এই নিয়ম মেনে চলার বিষয়টিই এক প্রকার প্রশাসন। প্রতিটি দেশের মানুষ তার সরকার নির্ধারিত নিয়ম অনুসরণ করে। সরকার কর্তৃক এই নিয়মের বাস্তবায়নই লোকপ্রশাসন। পাবলিক কথাটির অর্থ যেহেতু গভর্মেন্ট, পাবলিক এডমিনিস্ট্রেশন মানেও হচ্ছে গভর্মেন্ট এডমিনিস্ট্রেশন। সরকারের পলিসি প্লানিং থেকে পলিসি ফরমুলেশন, সরকারী প্রশাসন এর রক্ষনাবেক্ষন এবং ম্যানেজমেন্ট, রাষ্ট্র বিজ্ঞান, আইন ইত্যাদি হচ্ছে লোকপ্রশাসন এর ফোকাস এরিয়া। মোটা দাগে লোক প্রশাসন এর কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে সরকার। লোক প্রশাসন হচ্ছে একটি মাল্টিডিসিপ্লিনারি সাবজেক্ট।


লোক প্রশাসন মূলত রাষ্ট্রবিজ্ঞান থেকে এসেছে। তবে কিছু কিছু বিষয় এসেছে ব্যবস্থাপনা থেকে। এটা মূলত একটি ব্যবহারিক সাবজেক্ট। একঘেয়েমি পড়াশোনা নেই। তাই বিষয়টির প্রাথমিক ধারণা পেতে শুরুর দিকে লোকপ্রশাসনের পরিচয়, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা, অর্থনীতি,হিসাববিজ্ঞান, তথ্যপ্রযুক্তি প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়। পরবর্তীতে বিভিন্ন ব্যবহারিক দিক বোঝাতে, বাংলাদেশের প্রশাসন ও রাজনৈতিক ইতিহাস, স্থানীয় সরকার, মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা, ব্যাংক ব্যবস্থাপনা প্রভৃতি পড়ানো হয়। বিষয়টি সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে অন্তর্ভুক্ত। ৪ বছরের স্নাতক শেষে একজন শিক্ষার্থী BSS বা ব্যাচেলর অফ সোশাল সায়েন্স ডিগ্রি লাভ করে। 


বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের অধিকাংশ শিক্ষার্থীদের মূল লক্ষ্য থাকে বিসিএস বা অন্যান্য সরকারি চাকুরী। লোকপ্রশাসন বিভাগের পাঠ্যসূচিতে এমন বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত আছে যা পরবর্তীতে সরকারি চাকুরী কিংবা বিভিন্ন প্রশিক্ষণে যথেষ্ট সহায়তা করবে। তবে লোকপ্রশাসনে পড়লেই যে নিশ্চিতভাবে বিসিএস ক্যাডার বা সরকারি চাকুরী পেয়ে যাবেন এমনটাও না। নিজের শ্রম এবং মেধা দিয়েই নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। যদিও বিসিএস বা সরকারি চাকুরীতে সব সাব্জেক্ট থেকেই যাওয়া যায় তবে মজার বিষয় হলো, বিসিএস বা সরকারি চাকুরীতে প্রবেশের পরে যেসব প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় তা লোকপ্রশাসনের শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষাজীবনেই পেয়ে যায়। এমনকি বাংলাদেশের যত প্রশাসনের ব্যক্তি আছে সবাইকে কিন্তু চাকরিতে জয়েন করার আগে লোক প্রশাসনের উপর প্রশিক্ষণ/কোর্স করতে হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবজেক্টগুলোর মধ্যে একমাত্র পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এর নামেই বাংলাদেশে মন্ত্রনালয় আছে। তবে লোকপ্রশাসন বিভাগের কোন শিক্ষা ক্যাডার নেই। তবে, প্রাইভেট সেক্টরে রয়েছে মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা (HR), প্রশাসন, প্রশিক্ষণ, গবেষণা বিভাগে চাকুরীর সুযোগ। এছাড়াও রয়েছে ব্যাংক, বীমা, এনজিও, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনে চাকুরীর সুযোগ।


আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসনই সম্পর্কে বলতে গেলে এটুকু বলবো, যেকোন ডিপার্টমেন্টের জন্যই যে বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তা হলো শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক। লোকপ্রশাসন বিভাগের এই বিষয়টি সত্যিই প্রশংসনীয়। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের এক আত্মীক বন্ধন দেখা যায় লোকপ্রশাসন বিভাগে। এই বিভাগের রয়েছে একটি সমৃদ্ধ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন। প্রতি বছর গরীব এবং মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেওয়া হয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন থেকে। পড়াশোনার চাপ নেই বললেই চলে। একটু বুঝে পড়াশোনা করলেই পরীক্ষায় ভালো করা সম্ভব। ডিপার্টমেন্টের এভারেজ সিজিপিএ ৩.০০+ তাই ফলাফল নিয়েও দুশ্চিন্তার কিছু নেই। যেহেতু চাপ কম তাই বাইরের বিভিন্ন কার্যক্রম এর সাথে যুক্ত থেকে নিজের স্কিল ডেভেলপ এর সুযোগ রয়েছে। ডিপার্টমেন্টেই স্কিল ডেভেলপমেন্টের জন্য রয়েছে পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কমিউনিকেশন ক্লাব। সিনিয়র-জুনিয়র সম্পর্ক অনেক ভালো। সিনিয়রদের থেকে সবসময় সব ধরনের সহযোগিতা পাওয়া যায়। যারা খেলাধুলায় পারদর্শী তাদের জন্য রয়েছে ক্রিকেট, ফুটবল, ব্যাডমিন্টন প্রভৃতি খেলাধুলার সুযোগ। তবে যারা ঘুরতে পছন্দ করে তাদের জন্য বলবো লোকপ্রশাসন বিভাগ থেকে ট্যুর বা বনভোজন এর আয়োজন কম হয়, সেক্ষেত্রে নিজ উদ্যোগে বন্ধুদের মাঝে ট্যুর-প্লান করে ঘুরতে যেতে পারবে। নিজেদের আন্তঃসম্পর্ক এবং বোঝাপড়া ভালো হয় এসব আয়োজন করলে। আরেকটি বিষয় হলো লোকপ্রশাসনে সরাসরি ডিপার্টমেন্ট রিলেটেড কোন জব নাই। তাই ৪/৫ বছর পর তোমার হাই সিজিপিএ কাজে লাগবে না যদি না যেকোন ইউনিভার্সিটি টিচার হইতে পারো। হ্যাঁ, এনজিও জবের ক্ষেত্রেও হাই সিজিপিএ-টা কাজে লাগবে৷ কিন্তু সরকারি চাকুরির ইচ্ছা থাকলে আক্ষরিক অর্থে সিজিপিএ শুধুই সাময়িক প্রশান্তি। এখন অবশ্য সরকারি চাকুরী সোনার হরিণ তাই সিজিপিএ হাই রাখার জন্য লোকপ্রশাসন নিঃসন্দেহে একটি আদর্শ ডিপার্টমেন্ট।


আপাতত এটুকুই, যদি ভালো লেগে থাকে (ভালো না লাগার কিছু নেই অবশ্য😋) তাহলে কোন প্রকার দ্বিধা ছাড়াই তার পছন্দক্রমের সবার উপরে লোকপ্রশাসন বিভাগকে রাখতে পারো। সর্বোপরি এটুকু বলবো, পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সাবজেক্টটি তোমাকে দক্ষ মাল্টি ট্যালেন্টেড প্রশাসক হতে সাহায্য করবে।


এ এম গানিউম মাহাবুব (১ম বর্ষ)

লোকপ্রশাসন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়


তথ্যসূত্র:

১.ড. মোসলেহ উদ্দীন আহমদ (সাবেক চেয়ারম্যান) লোকপ্রশাসন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। 

২. মো. মাহমুদুর রহমান (সহযোগী অধ্যাপক)

লোকপ্রশাসন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। 

৩. আসিফ খাঁন (২য় আবর্তন)  

লোক প্রশাসন বিভাগ, বিইউপি।


#SubjectReview

#BODUC




Muinuddin Gaus

Mohammad Muinuddin Gaus, a dedicated student of the Islamic Studies department at the University of Dhaka, shares valuable information on various online platforms. To learn more about him, follow his social media links.

Post a Comment

Previous Post Next Post