♦Subject Review: Institute of Disaster Management and Vulnerability Studies
🛑কেন ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা’ নিয়ে পড়বেন
দীর্ঘ মেয়াদে বন্যার মতো দুর্যোগ থেকে রক্ষা পেতে হলে চাই গবেষণা, পরিকল্পনা ও পূর্বপ্রস্তুতি। দেশের অনেক শিক্ষার্থী তাই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় পড়ছেন, প্রস্তুত হচ্ছেন। দুর্যোগ রোধে কিংবা যথাযথ সাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে কীভাবে ভূমিকা রাখতে পারেন তাঁরা
🛑কোথায় পড়ানো হয়?
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাবিষয়ক পড়ালেখা ও গবেষণার পরিধি বড় হচ্ছে। গত দশকে এ দেশের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু হয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় চার বছরের স্নাতক ডিগ্রি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি), যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিসহ বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্নাতক করার সুযোগ আছে। এ ছাড়া দুই বছর মেয়াদি ‘সাধারণ’ ও ‘পেশাগত’—দুই ধরনের মাস্টার্স ডিগ্রি দিচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশসহ (আইইউবি) কয়েকটি সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। এ ছাড়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, আইইউবি, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, বিইউপিসহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘পরিবেশ বিজ্ঞান’ পড়ানো হয়, যার পাঠ্যক্রমে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার বিষয়গুলোও অন্তর্ভুক্ত।
🛑কাজের সুযোগ কোথায়?
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা একটি ‘মাল্টিডিসিপ্লিনারি’ বিষয়। এই বিভাগের সঙ্গে যেমন ভূগোলের সম্পৃক্ততা আছে, তেমনি আছে আবহাওয়াবিজ্ঞান কিংবা সামাজিক বিজ্ঞানের যোগ। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাকে দুই ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। যার এক ভাগে পুরোটুকুই বিজ্ঞানভিত্তিক, বিষয়বস্তু বৈজ্ঞানিক মডেলিং, কোয়ান্টিটেটিভ অ্যানালাইসিস ইত্যাদি। আরেকটি ভাগ কাজ করে সামাজিক দিকগুলো নিয়ে। যেমন দারিদ্র্য, ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী, লিঙ্গ, প্রতিবন্ধকতা ইত্যাদির কারণে সৃষ্ট সমস্যা এর অন্তর্ভুক্ত। এই দুই ক্ষেত্রেই গবেষণা ও কাজ করার সমান সুযোগ আছে। এই বিষয়ে পড়াশোনা করে শিক্ষার্থীরা দেশ বিদেশের বিভিন্ন এনজিও, উন্নয়নমূলক প্রকল্পে কাজ করার সুযোগ পান। পাওয়া যায় বিভিন্ন সরকারি চাকরিও। বর্তমানে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন প্রকল্পে কাজ করছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে পাশ করা অনেক শিক্ষার্থী। এ ছাড়া গবেষণার অনেক ক্ষেত্র থাকায় উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশেও যাচ্ছেন অনেকে।
🛑কেমন গবেষণা হচ্ছে?
‘আমাদের মূল গবেষণাগুলো এখন বেশির ভাগই বন্যা নিয়ে। এরপর অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে পর্যায়ক্রমে আসে ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, ভূমিধস। সিলেটে সাম্প্রতিক বন্যার আগে যে বন্যাটি হয়েছিল, সেই সময় থেকেই আমরা বিশেষভাবে এই বন্যা নিয়ে আমাদের বিভাগে গবেষণা শুরু করেছি এবং করছি। আমরা মূলত ফ্লাড মডেলিংয়ের মাধ্যমে বৃষ্টির সম্ভাব্য পরিমাণ, এর ড্রেনেজ ব্যবস্থা, ইত্যাদি আমলে নিয়ে গবেষণার কাজ চালিয়ে যাচ্ছি,’ বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিপার্টমেন্টের ডিন এবং ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চেয়ারপারসন মো. জিল্লুর রহমান।
কিন্তু দুর্যোগ প্রতিরোধে এ সব গবেষণা আদতে কতটুকু কাজে আসছে? প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘২০১২ সালে এই বিভাগ প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকেই আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার ছিল গবেষণা। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিতই গবেষণা হচ্ছে এখন। তবে আমাদের এখন পলিসি মেকিংয়ের সঙ্গে গবেষণার যোগসূত্র বৃদ্ধি করার দিকে আরও জোর দেওয়া দরকার। এই দিকটার ঘাটতি পূরণ করা গেলে দ্রুতই এসব গবেষণা আলোর মুখ দেখবে বলে আমি মনে করি।’
গবেষণা খাতে সুযোগ বেশি বলেই বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের ডিজাস্টার অ্যান্ড হিউম্যান সিকিউরিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন রওনক তাবাসসুম, ‘শুরু থেকেই আমার গবেষণা এবং বিদেশে উচ্চশিক্ষা নেওয়ার পরিকল্পনা থাকায় এই বিষয়ে পড়ার ব্যাপারে আগ্রহ জন্মে। সম্প্রতি আমাদের বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান স্যারের তত্ত্বাবধানে বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থী মিলে শব্দদূষণের প্রভাবের ওপর একটি গবেষণায় কাজ করি। আমাদের একটা পেপারও পাবলিশ হয়েছে।’
রাইসা ইমরান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার অ্যান্ড ভালনারেবল স্টাডিজ বিভাগ থেকে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। পরে অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রোজেক্ট অফিসার হিসেবে যোগ দেন বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিতে। সেখানে তিনি দুটি প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। যার একটির বিষয় ছিল শহর এলাকায় ভূমিকম্পের পূর্বপ্রস্তুতি। এখন ‘গ্রিপ’ নামক একটি নলেজ শেয়ারিং প্রজেক্টের মনিটরিং এবং ইভালুয়েশন কো-অর্ডিনেটর হিসেবে কাজ করছেন দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে। রাইসা বলেন, ‘পানি নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজ্যতা, আরবান রেজিলিয়েন্স, এই বিষয়গুলো আমার আগ্রহ এবং গবেষণার বিষয়। আমি এসব বিষয়ের ওপর গবেষণাপত্রও প্রকাশ করেছি। সামনেও গবেষণা নিয়ে এগোনোর ইচ্ছা আছে।’
🛑প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ‘মানুষের’ দুর্যোগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত বিভাগ ‘ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার অ্যান্ড ভালনারেবল স্টাডিজ’। এই বিভাগে পড়াশোনায় মূলত সামাজিক দিকেই বেশি জোর দেওয়া হয়। বিভাগের প্রভাষক আওফা ইসলাম বলেন, ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে যেমন পরিবেশগত দিক বিবেচনায় রাখতে হয়, তেমনি মানুষের বিভিন্ন কার্যকলাপেও দিকনির্দেশনা এবং সমন্বয়ের প্রয়োজন পড়ে। দুর্যোগকালীন আশ্রয়ণ প্রকল্প, মানুষের মধ্যে বিপদ সংকেতের প্রভাব, মেয়েদের আশ্রয়কেন্দ্রে আসতে অনীহা, সাড়াদানসহ বিভিন্ন মানবসৃষ্ট কার্যাবলিকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার উপযোগী করে তোলাসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ই মূলত আমাদের বিভাগের পড়ানো হয়।’
🛑কেন পড়া উচিত?
বাংলাদেশসহ বেশকিছু দেশ জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম শিকার। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরিমাণ বাড়ছে। এই দুর্যোগের ক্ষতি কমানোর জন্য প্রয়োজন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার পর্যাপ্ত জ্ঞান ও গবেষণা। ‘প্রকৃতিসৃষ্ট বিভিন্ন দুর্যোগ কিন্তু ঠেকানো সম্ভব নয়; তবে যথাযথ জ্ঞান প্রয়োগের মাধ্যমে এর ক্ষতি ও প্রভাব কমিয়ে আনা সম্ভব। মূলত এ জন্যই আমি মনে করে এই বিষয়ে আরও পড়াশোনা ও গবেষণা প্রয়োজন। এ ছাড়া শুধু অনার্সেই নয়, বরং মাধ্যমিক কিংবা উচ্চমাধ্যমিকেও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার অনেক বনিয়াদি জ্ঞান পাঠ্যক্রমে থাকা উচিত বলে আমি মনে করি,’ বলছিলেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের ডিজাস্টার অ্যান্ড হিউম্যান সিকিউরিটি ম্যানেজমেন্টের সহকারী অধ্যাপক সালিত চাকমা।